ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় ইউপি সদস্যসহ ৬ জনকে ‘গায়েবী’ অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা পুলিশের!

pekua,,পেকুয়া প্রতিনিধি :::
কক্সবাজারের পেকুয়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে এক ইউপি সদস্যসহ ৬জনকে ‘গায়েবী’ অস্ত্র দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, গত ৮ অক্টোবর শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে পেকুয়া থানার এসআই সুমনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের আরবশাহ বাজারের স্থানীয় ইউপি সদস্য ও রাজাখালী ২ নং ওয়ার্ড় আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নেজাম উদ্দিনের কার্যালয় থেকে তাকেসহ অপর ৫ব্যবসায়ীকে আটক করেন পেকুয়া থানা পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, মিয়া পাড়া এলাকার মৃত আবুল কাসেমের পুত্র ও ইউপি সদস্য নেজাম উদ্দিন নেজু, একই এলাকার হোসেন আহমদের ছেলে আলী হায়দার, গোলাম রহমানের ছেলে আনিসুর রহমান, আনোয়ার আলীর ছেলে ফজল করিম, হানিফের ছেলে মুনির ও বাঁশখালীর পশ্চিম পুঁইছড়ি এলাকার আরবশাহ বাড়ির আলমগীরের ছেলে দিদারুল ইসলাম।

আটক ইউপি সদস্য নেজাম উদ্দিন নেজু জানায়, ওই দিন রাত ৯টায় তারা চট্টগ্রাম শহর থেকে বিয়ের দাওয়াত সেরে আরব শাহ বাজারে আসেন। আরবশাহ বাজারে তার কার্যালয়ে বসে তিনিসহ আরো কয়েকজন ব্যবসায়ীক বন্ধু ও কর্মচারী গল্পগুজব করছিলেন। এসময় রাত সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ পেকুয়া থানার এসআই সুমনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তার কার্যালয়ে হানা দেয়। তিনি আরো জানায়, এসময় তাদের কিছু বুঝতে না দিয়ে পুলিশের গাড়ীতে উঠিয়ে থানায় নিয়ে আসে। পরে পুলিশ আমার কার্যালয় থেকে অস্ত্র ও মাদক দ্রব্যে পেয়েছে বলে প্রচার করে।

জানা গেছে, আজ দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ইউপি সদস্যসহ ৬ জনকে আটক করে পুলিশ। ওই সময় থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আজ সন্ধ্যা ৬টায় থানা হাজতে আছে। তবে ওই সময় থেকে আটককৃতদের পুলিশ তাদের নিকটতœীয়দের সাথে দফারফা করার চেষ্টা করছে। ইউপি সদস্যসহ আরবশাহ বাজারের ছয়জন আটক ও পুলিশের অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল দিনব্যাপী থানায় এ নিয়ে নানা নাকীয়তা দেখা গেছে। আটকের খবর এলাকায় জানা জানি হলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শতশত লোকজন থানায় ভিড় করে। তারা এ ঘটনাকে সাজানো ও পরিকল্পিত চক্রান্ত বলে জানায়। গতকাল রোববার দুই দফায় থানায় গিয়ে দেখা গেছে, আটক ইউপি সদস্যের পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও কিছু লোক এটা নিয়ে পুলিশের সাথে দেনদরবার করছে।

পেকুয়া থানার এসআই সুমন রোববার (৯ অক্টোবর) বিকাল ৫টা ১৭ মিনিটে এ প্রতিবেদককে জানান, একটু অপেক্ষা করুন। ক্লিয়ার হয়ে সবকিছু জানাচ্ছি!

পেকুয়া থানার ওসি জিয়া মোহাম্মদ মোস্তাফিজ ভূঁইয়া জানায়, ওই ইউপি সদস্যের কার্যালয়ের ডাস্টবিন থেকে পত্রিকার কাগজ মোড়ানো একটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ইউপি সদস্যসহ ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। আটক করার হয়নি। তবে তাদের (গতকাল রোববার বিকাল ৫টা পর্যন্ত) থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

তবে ওসির এমন বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষন করে ইউপি সদস্য নেজাম উদ্দিন নেজুর পরিবার ও আরবশাহ বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, স্থাণীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ইশারায় অস্ত্র নাটক সাজিয়ে নেজুসহ ব্যবসায়ীদের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আটক সবাই আরবশাহ বাজারের ব্যবসায়ী। ইউপি সদস্যের কার্যালয় থেকে পুলিশের কথিত অস্ত্র উদ্ধার চরম হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা এটাকে পুলিশের গায়েবী অস্ত্র বলে অভিহিত করেছেন।
আটক ইউপি সদস্যের পরিবার ও স্থানীয়দের সুত্রে জানা গেছে, স্থাণীয় ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুরের সাথে নেজাম উদ্দিন নেজুর নির্বাচনের পর থেকে বিরোধ সৃষ্টি হয়। চেয়ারম্যানের নানান ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে নেজু প্রায় সময় প্রতিবাদ করত। এ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য নেজুর মধ্যে বিরোধ প্রকট আকার ধারন করে। ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর নেজুর ওয়ার্ড়ের হত দরিদ্রের মাঝে ভিজিএফের চাল থেকে বঞ্চিত করেন। পরে নেজু ইউপি সদস্য নেজু তার ব্যক্তিগত অর্থে তার ওয়ার্ড়ের দরিদ্র লোকজনের মাঝে চাল বিতরণ করেন। ছৈয়দ নুর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাজাখালী পরিষদে তার অনুগত এলাকার চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে বিচার ও শালিস বানিজ্যে মেতে উঠে। এ নিয়েও ইউপি সদস্য নেজু চেয়ারম্যানের এহেন কর্মকান্ডে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার ইউপি কার্যালয়ে চেয়ারম্যানের সাথে নেজুর বাকবিতন্ডা হয়। গত কয়েক মাস পূর্বে রাজাখালীতে বিভিন্ন ওয়ার্ড়ের শত শত দরিদ্র লোকজনকে সরকারী ঘর দেওয়ার কথা বলে চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুরের নিযুক্ত গুটিকয়েক লোক লাখ লাখ টাকা আদায় করেন। এসবেরও প্রতিবাদ করেন ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা নেজাম উদ্দিন নেজু।

স্থানীয়রা জানায়, ওই ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর মূলত ইউপি সদস্যকে ঘায়েল করতেই অস্ত্র দিয়ে ইউপি সদস্যকে পুলিশে দিয়েছে। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্যের ভাই মানিক ও আবুল বশর জানায় আরবশাহ বাজারে নেজুর নিজস্ব কার্যালয় আছে। ওইদিন পুলিশ তাকে আটক করে। থানায় এনে পরের দিন অস্ত্রের বিষয়টি ছুটে দেয়। এটি চক্রন্তকারীদের সাজানো অস্ত্র উদ্ধারের নাটক। লোকজন ও ব্যবসায়ীরা জেনেছেন পুলিশের সাথে ট্ওায়ারের নিকট এক যুবক মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। এরপর জানতে পারি নেজুকে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেছে। এটি চেয়ারম্যান ছৈয়দনুরের চক্রান্ত। রাজাখালীতে অস্ত্রের মুলহোতা ওই ছৈয়দনুর। তার কাছে অস্ত্রের কমনি নেই। প্রতিপক্ষকে ফাসাতে পুলিশকেস ম্যানেজ করে এ দুর্ধান্ত অন্যায় কাজ করা হয়েছে আমার ভাইকে নিয়ে। ইউপি সদস্যের কার্যালয় থেকে পুলিশ কোন অস্ত্র পায়নি এমনই অভিযোগ আটক লোকজনেরও।

পাঠকের মতামত: